

উখিয়া পরিচ্যা লাল ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় গড়ে ওঠা ‘আল মারওয়া হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার’-এর নামে ভয়াবহ প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। গ্রামাঞ্চলের সহজ-সরল মানুষদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।
অভিযোগ অনুযায়ী, ১৮ জন মহিলা মার্কেটিং অফিসার নিয়োগ দিয়ে তাদের মাধ্যমে ফ্রি চিকিৎসা, চাকরির নিশ্চয়তা, ফ্যামিলি ডিসকাউন্ট কার্ড, হাসপাতালের নামে শেয়ার সঞ্চয় পাশবই এমনকি চাল-ডাল ও গ্যাস দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়। টাকা নেওয়ার সময় হাসপাতালের নামেই রশিদ দেওয়া হলেও প্রতিশ্রুত কোনো সুবিধাই এখনো ভোগ করতে পারেনি সাধারণ মানুষ।
ভুক্তভোগী ছালেহা আক্তার (আইডি: ২০৫০২), আয়েশা বেগম (আইডি: ২৫১৭৭), আজিজা (আইডি: ২৫১৭০) ও নুরুল কবির (আইডি: ২৫১৪২) জানান, ফ্যামিলি ডিসকাউন্ট কার্ড করার নামে টাকা নেওয়া হলেও এখনো হাতে কোনো কার্ড পাননি। শুধু কার্ড দেখানো হয়েছে, দেওয়া হয়নি। ফলে তারা মনে করছেন প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন।
এদিকে যারা মাঠে ঘুরে টাকা সংগ্রহ করেছেন সেই মহিলা মার্কেটিং অফিসাররাও প্রতারণার শিকার। তাদের মধ্যে নুসরাত সুলতানা শিফা, শিফা বড়ুয়া, রোকেয়া বেগম, মোহসেনা আক্তার, মিতু বড়ুয়া ও জমিলা অভিযোগ করে বলেন, প্রতি মাসে ৮ হাজার টাকা বেতনের শর্তে নিয়োগ দেওয়া হলেও মাসের পর মাস তাদের বেতন দেওয়া হয়নি। উল্টো টাকা চাইতে গেলে নানা হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এমনকি সাংবাদিকদের জানালে কোনো লাভ হবে না বলে তাদের হুমকি দেওয়া হয়েছে।
মার্কেটিং অফিসারদের অভিযোগ, “আমরা রোদ-বৃষ্টিতে গ্রামে গ্রামে গিয়ে মানুষকে বুঝিয়ে টাকা এনেছি। সেই টাকা হাসপাতালের কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিয়েছি। অথচ এখন আমাদের বেতন দেয় না। আমাদের পরিশ্রম ও কষ্টের কোনো মূল্য নেই।”
এ ব্যাপারে হাসপাতালের সেক্রেটারি আব্দুল হামিদ ঘটনাটির সত্যতা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “মার্কেটিং অফিসাররা আমাদের হয়ে মাঠে কাজ করেছেন। তাদের বেতনের টাকা বকেয়া আছে সত্য। তবে আমরা ধীরে ধীরে সব পরিশোধ করছি। আজকেও কয়েকজনকে টাকা দেওয়া হয়েছে।” একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, “দুই-তিন মাসের মধ্যে হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে।”
কিন্তু বাস্তবতা হলো—হাসপাতালের কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি, অথচ এর নাম ব্যবহার করে গ্রামাঞ্চলের মানুষকে প্রতিশ্রুতির জালে ফাঁসানো হয়েছে। এতে ভুক্তভোগীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত, তেমনি প্রতারিত হয়েছেন নিয়োগ পাওয়া মার্কেটিং অফিসাররাও।
সচেতন মহল বলছেন, স্বাস্থ্যসেবার নামে এমন প্রতারণা সমাজে ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে। সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া কেবল অপরাধ নয়, এটি একটি সুপরিকল্পিত চক্রের অংশ। তাই ভুক্তভোগীদের দ্রুত আইনের আশ্রয় নেওয়া উচিত এবং কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারির দাবি তুলেছেন তারা।
পাঠকের মতামত